১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

বান্দরবানের অভিযান গেলে বাধা, বিধিনিষেধের তোয়াক্কা নেই ইটভাটার মালিকদের

  • প্রকাশের সময় : ০৫:৫৩:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 33

 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

বান্দরবানের লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও থানচি উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বেড়েই চলেছে।

 

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা বা প্রশাসনের নির্দেশ—কোনোটিরই তোয়াক্কা করছেন না মালিকরা। পাহাড় ও কৃষিজমি কেটে চলছে ইট উৎপাদন, যার ফলে পরিবেশদূষণ বাড়ছে এবং বনভূমির গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে। জেলার প্রশাসনের তালিকায় ৭টি উপজেলায় ৭০টি ইটভাটার নাম রয়েছে। এসবের কোনটিরই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। গত বছর সব ইটভাটা বন্ধ ছিল।

 

তবে বর্তমানে লামা উপজেলায় ৩৬টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪টি, আলীকদমে ২টি এবং থানচিতে ১টি ইটভাটা চালু রয়েছে। রুমা, রোয়াংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলায় ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। লামার ফাইতং ইউনিয়নে মাত্র ২৬টির মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ করা গেলেও ১৫ ও ১৮ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান বিফল হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের দুই শতাধিক সদস্য থাকলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মালিক ও শ্রমিকদের বাধার কারণে ভাটায় প্রবেশ করতে পারেননি।

 

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, “মালিক-শ্রমিকদের এমন বেপরোয়া মনোভাব আগে দেখিনি।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, অভিযান চালিয়ে বহু ভাটা জরিমানা করা হয়েছে, কিছু ভাঙাও হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই মালিকরা তা আবার চালু করে দিচ্ছেন।” সরেজমিনে দেখা গেছে, লামার ৪১টি ভাটার মধ্যে মাত্র ১৩টিতে কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলোতে পাহাড় ও কৃষিজমি খনন করে কাঠ পোড়ানো হয়।

 

শিবাতলী ও শিবাতলীপাড়ায় তিনটি পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ইটভাটার তাপ, ধোঁয়া ও যানবাহনের শব্দে স্থানীয়রা নাকাল। শিবাতলীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১১টি ইটভাটায় পাহাড় ও বনধ্বংসের কারণে পানির উৎস শুকিয়ে গেছে। দূষণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে নারী ও শিশুদের। চারটিতে পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ড্রাম চিমনি ব্যবহার হচ্ছে। অন্যগুলোতে জিগজ্যাগ চুল্লি বা ইটের চিমনি।

 

লামা ফাইতংয়ের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তার আহ্মদ স্বীকার করেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢুকতে না পারার ঘটনা সত্য। তিনি বলেন, সরকার বা প্রশাসনকে বাধা দিয়ে ইটভাটা চালানো সম্ভব নয়। তবে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং শত শত শ্রমিকের কর্মসংস্থান বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হবে।

 

প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাই। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, শুধু আমাদের দায়িত্ব দিয়ে সব ভাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বন বিভাগ যদি জ্বালানি কাঠ ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, ইটভাটা স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জনবল ও অর্থসংকট রয়েছে। ৭০টি ভাটা ধ্বংস করতে ১৫ থেকে ২০ দিন ও ৫৫-৬০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, নভেম্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢুকতে না পারায় মালিকরা বন্ধ ভাটাগুলো পুনরায় চালু করার সাহস পেয়েছে। প্রশাসন যেকোনো সময় অভিযানে নামার জন্য প্রস্তুত।

জনপ্রিয়

চলে গেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা

বান্দরবানের অভিযান গেলে বাধা, বিধিনিষেধের তোয়াক্কা নেই ইটভাটার মালিকদের

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৩:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

বান্দরবানের লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও থানচি উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বেড়েই চলেছে।

 

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা বা প্রশাসনের নির্দেশ—কোনোটিরই তোয়াক্কা করছেন না মালিকরা। পাহাড় ও কৃষিজমি কেটে চলছে ইট উৎপাদন, যার ফলে পরিবেশদূষণ বাড়ছে এবং বনভূমির গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে। জেলার প্রশাসনের তালিকায় ৭টি উপজেলায় ৭০টি ইটভাটার নাম রয়েছে। এসবের কোনটিরই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। গত বছর সব ইটভাটা বন্ধ ছিল।

 

তবে বর্তমানে লামা উপজেলায় ৩৬টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪টি, আলীকদমে ২টি এবং থানচিতে ১টি ইটভাটা চালু রয়েছে। রুমা, রোয়াংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলায় ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। লামার ফাইতং ইউনিয়নে মাত্র ২৬টির মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ করা গেলেও ১৫ ও ১৮ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান বিফল হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের দুই শতাধিক সদস্য থাকলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মালিক ও শ্রমিকদের বাধার কারণে ভাটায় প্রবেশ করতে পারেননি।

 

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, “মালিক-শ্রমিকদের এমন বেপরোয়া মনোভাব আগে দেখিনি।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, অভিযান চালিয়ে বহু ভাটা জরিমানা করা হয়েছে, কিছু ভাঙাও হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই মালিকরা তা আবার চালু করে দিচ্ছেন।” সরেজমিনে দেখা গেছে, লামার ৪১টি ভাটার মধ্যে মাত্র ১৩টিতে কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলোতে পাহাড় ও কৃষিজমি খনন করে কাঠ পোড়ানো হয়।

 

শিবাতলী ও শিবাতলীপাড়ায় তিনটি পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ইটভাটার তাপ, ধোঁয়া ও যানবাহনের শব্দে স্থানীয়রা নাকাল। শিবাতলীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১১টি ইটভাটায় পাহাড় ও বনধ্বংসের কারণে পানির উৎস শুকিয়ে গেছে। দূষণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে নারী ও শিশুদের। চারটিতে পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ড্রাম চিমনি ব্যবহার হচ্ছে। অন্যগুলোতে জিগজ্যাগ চুল্লি বা ইটের চিমনি।

 

লামা ফাইতংয়ের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তার আহ্মদ স্বীকার করেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢুকতে না পারার ঘটনা সত্য। তিনি বলেন, সরকার বা প্রশাসনকে বাধা দিয়ে ইটভাটা চালানো সম্ভব নয়। তবে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং শত শত শ্রমিকের কর্মসংস্থান বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হবে।

 

প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাই। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, শুধু আমাদের দায়িত্ব দিয়ে সব ভাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বন বিভাগ যদি জ্বালানি কাঠ ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, ইটভাটা স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জনবল ও অর্থসংকট রয়েছে। ৭০টি ভাটা ধ্বংস করতে ১৫ থেকে ২০ দিন ও ৫৫-৬০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, নভেম্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢুকতে না পারায় মালিকরা বন্ধ ভাটাগুলো পুনরায় চালু করার সাহস পেয়েছে। প্রশাসন যেকোনো সময় অভিযানে নামার জন্য প্রস্তুত।