০২:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬

১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান: দেশে ফিরলেন তারেক রহমান, গণতন্ত্র ও নিরাপদ বাংলাদেশের প্রত্যয়

  • প্রকাশের সময় : ০১:০৩:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 6

 

ঢাকা, বৃহস্পতিবার:

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন ও সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে স্বদেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

 

বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় নেতাদের সঙ্গে আলিঙ্গন ও কুশল বিনিময় করেন তারেক রহমান। এছাড়া ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নেন তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু।

 

বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে খালি পায়ে মাটি স্পর্শ করে একমুঠো মাটি হাতে নেন তারেক রহমান—যা উপস্থিত নেতাকর্মীদের আবেগে আপ্লুত করে। এরপর বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার না করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ লেখা লাল-সবুজ রঙে সাজানো একটি বাসে চড়ে রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় গণসংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।

 

বিমানবন্দর থেকে সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। পথে পথে বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বাসের সামনের অংশ থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান। বাসে তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

 

সংবর্ধনা মঞ্চে প্রায় ১৬ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন,

“আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায় এবং যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাওয়ার প্রত্যাশা করে।”

 

তিনি আরও বলেন,

“আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই—যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, যেখানে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।”

 

দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন,

“এই দেশে পাহাড়ের মানুষ আছে, সমতলের মানুষ আছে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। আজ আমাদের সময় এসেছে—সকলকে নিয়ে দেশ গড়ার।”

 

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো গুরুতর অসুস্থ তার মমতাময়ী মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখা, যিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি সংবর্ধনা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। পরে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

 

এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং নির্ধারিত সময়েই রাজধানীতে পৌঁছায়।

 

দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে অভূতপূর্ব আগ্রহ, আবেগ ও প্রত্যাশা। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং গণতন্ত্র, অধিকার ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জনপ্রিয়

চলে গেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা

১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান: দেশে ফিরলেন তারেক রহমান, গণতন্ত্র ও নিরাপদ বাংলাদেশের প্রত্যয়

প্রকাশের সময় : ০১:০৩:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

 

ঢাকা, বৃহস্পতিবার:

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন ও সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে স্বদেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

 

বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় নেতাদের সঙ্গে আলিঙ্গন ও কুশল বিনিময় করেন তারেক রহমান। এছাড়া ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নেন তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু।

 

বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে খালি পায়ে মাটি স্পর্শ করে একমুঠো মাটি হাতে নেন তারেক রহমান—যা উপস্থিত নেতাকর্মীদের আবেগে আপ্লুত করে। এরপর বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার না করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ লেখা লাল-সবুজ রঙে সাজানো একটি বাসে চড়ে রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় গণসংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।

 

বিমানবন্দর থেকে সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। পথে পথে বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়েন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বাসের সামনের অংশ থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান। বাসে তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

 

সংবর্ধনা মঞ্চে প্রায় ১৬ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন,

“আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায় এবং যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাওয়ার প্রত্যাশা করে।”

 

তিনি আরও বলেন,

“আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই—যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, যেখানে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।”

 

দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন,

“এই দেশে পাহাড়ের মানুষ আছে, সমতলের মানুষ আছে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। আজ আমাদের সময় এসেছে—সকলকে নিয়ে দেশ গড়ার।”

 

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো গুরুতর অসুস্থ তার মমতাময়ী মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখা, যিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি সংবর্ধনা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। পরে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

 

এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং নির্ধারিত সময়েই রাজধানীতে পৌঁছায়।

 

দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে অভূতপূর্ব আগ্রহ, আবেগ ও প্রত্যাশা। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং গণতন্ত্র, অধিকার ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।