
ঢাকা, বৃহস্পতিবার:
নির্বাসন ও সংগ্রামের দীর্ঘ দেড় যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরে মায়ের সান্নিধ্য পেলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যান তারেক রহমান। দীর্ঘ সময় পর দেশের মাটিতে মাকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মায়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন তারেক রহমান। পরে মায়ের পাশে বেশ কিছুক্ষণ একান্ত সময় কাটান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তিনি রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসভবনে অবস্থান করবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট (বিজি-১০২) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রথমে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে বুকে বুক মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেন তারেক রহমান।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ খ্যাত লাল-সবুজ রঙের বিশেষ নিরাপত্তা সম্বলিত একটি বাসে চড়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে যান তিনি। সেখানে পৌঁছে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান এবং বিশেষ মঞ্চে উঠে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন।
সংক্ষিপ্ত ভাষণে তারেক রহমান বলেন,
“আজ আপনারা জানেন, এখান থেকে আমি আমার মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যাব। যে মানুষটি এ দেশের মাটি ও মানুষকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। সন্তান হিসেবে আমি চাই, আপনারা আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করবেন।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার মন পড়ে আছে আমার মায়ের হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু যাদের জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন—সেই মানুষদের ফেলে রেখে আমি যেতে পারিনি। তাই হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনাদের সামনে এসে কৃতজ্ঞতা জানানো আমার দায়িত্ব মনে করেছি।”
বিএনপির কর্মসূচি অনুযায়ী, শুক্রবার বাদ জুমা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার ও সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন তারেক রহমান। শনিবার নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে। নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়; বরং দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, গণমানুষের প্রত্যাশা এবং জাতীয় ঐক্যের এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এক সময় পাহাড়সম অভিযোগ মাথায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি—থাকতে হয়েছিল নির্বাসনে। আজ দেড় যুগ পর সেই তারেক রহমানই ফিরে এসেছেন দেশের মাটিতে আগের চেয়ে বহু গুণ বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে; গণমানুষের নেতা ও জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে।











